অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শুক্রবার, ২৭শে জুন ২০২৫ | ১৩ই আষাঢ় ১৪৩২


প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লিলাভূমি কুকরি-মুকরি সেজেছে নতুন রুপে


হাসনাইন আহমেদ মুন্না

প্রকাশিত: ৯ই জানুয়ারী ২০২১ রাত ০৯:৩২

remove_red_eye

১২৬৮


হাসনাইন আহমেদ মুন্না :  প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লিলাভূমি জেলার চরফ্যাসন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি সেজেছে নতুন রুপে। সাগর সৈকতের বেলাভূমি আর নানা প্রজাতির বৃক্ষ-তরুলতা, নয়নাভিরাম সৌন্দর্য কুকরি-মুকরির বাঁকে বাঁকে। রং বে-রংয়ের ছাতা, ঘোরার জন্য বাহারি নৌকা যেন দিন দিন আর্কষণ বাড়াচ্ছে মায়াবী এই দ্বীপের। ইতোমধ্যেই পর্যটকদের জন্য সরকারি রেষ্ট হাউজের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্দ্যোগে স¦ল্প খরচে থাকার জন্য হোম ষ্টে সার্ভিস চালু হয়েছে। আকাশ ছোঁয়া বিশাল সবুজ বাগান যেন ঘুড়তে যাওয়ার হাতছানি দিচ্ছে। তারুয়া সৈকতে লাল কাঁকড়া, নারিকেল বাগান, বালুর ধুম এর মনোমুগদ্ধকর নানান দৃশ্য কিছু সময়ের জন্য হলেও পর্যটকদের মন ভূলিয়ে দেয় প্রশাান্তির পরশে।
এক পাশে সমুদ্র আর এক পাশে ম্যানগ্রোভ বন। মাঝখানে বেলাভূমি। লালকাকড়ার দ্বীপ। এই বালুকাময় প্রান্তরে দিগন্ত বিস্তৃত নয়নাভিরাম দৃশ্য মেলে প্রতিদিন। ট্রলার বা স্পীড বোটে কুকরি যেতে পথে দেখা মেলে কুকরি-মুকরির অপরুপ নৈসর্গিক দৃশ্যসহ শান্ত সাগরের অসীম জলরাশি। সুন্দরবনের মতোই গহীন বনের বুক চিরে সরু জলো স্রোত বয়ে চলে। কুকরির বনে কেওরা, গেওরা, গোলপাতাসহ ২৭২ প্রজাতির উদ্ভিদ, বানর, হরিণসহ ৪৫ প্রজাতির প্রাণী, দেশি ও অতিথিসহ ২০৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে। সরকারি ভাবে একটি ইকো পার্ক নির্মাণেরও কাজ চলছে এখানে। যা বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ করবে।
বালুকাময় প্রান্তরে বেসরকারি উদ্দ্যোগে পর্যটকদের জন্য চেয়ার ও ছাতার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও বনের ভিতরে ঘোরার জন্য রয়েছে ছোট ছোট নৌকা । বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখি দেখার জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ ও  টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি ভাবে একটি মাত্র অত্যাধুনিক রেষ্ট হাউজ থাকলেও তা ব্যয়বহুল। আবাসন সংকট দূর করতে উদ্যোক্তারা গড়ে তুলেছেন হোম স্টে সার্ভিস। স্বাস্থ্যসম্মত ও স¦ল্পমূল্যে খাবারের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ভিলেজ রেষ্টুরেন্ট। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো নাজুক।
এখানে ঘুরতে আসা জাহিদ হোসেন ও রুবলে মিয়া জানান, করোনা প্রার্দুভাবের কারণে গত এপ্রিল থেকে ৪ মাস পর্যটক শূণ্য ছিলো কুকুরি-মুকরি। মানুষের উপস্থিতি কম হওয়ায় গাছপালাসহ প্রাণীকূল নতুন রুপ পেয়েছে। যা দেখতে ভালো লাগছে। আর এসব দৃষ্য শীতকালে বাড়তি রুপ পায়। তবে এখানে আসার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হওয়া প্রয়োজন।
ঢাকা থেকে আসা ব্যাসায়ী শিমুল হাসান বলেন, তিনি গত ২ বছর যাবত কুকরিতে বেড়াতে আসেন। তারমধ্যে এবারের ভ্রমণে অনেক সৌন্দর্য যোগ হয়েছে। বানর, হরিণ, বন্য শিয়াল, নানান ধরনের পাখির দেখা মিলছে। সব মিলিয়ে এখানকার পরিবশেটায় অন্যরকম ¯িœগ্ধতা বিরাজ করছে বলে বলেন তিনি।
কুকরি-মুকরি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, ইতোমধ্যে কুকরি-মুকরি পর্যটনের জন্য সারা দেশে পরিচিতী পেয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে উদ্যোক্তারা যদি এগিয়ে আসে তাহলে কুকরি দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা পর্যটন স্পট হিসাবে গড়ে উঠবে। দেশি বিদেশি পর্যটকদের আগমনে উপক’লীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি।
বর্তমানে কুকরি-মুকরি যেতে ট্রলার বা স্প্রীডবোট ব্যবহার করতে হয়। যা ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। একইসাথে এখানে কোন ম্যাপ, গাইডলাইন বা নির্দিষ্ট রুট নেই। ফলে পর্যটকদের হয়রানী হওয়ার সুজোগ থাকছে। তাই কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে কুকরি যেতে স্বল্প মূল্যে আধুনিক নিরাপদ নৌযান ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে এখানে আসতে বিশেষ লঞ্চ বা প্যাকেজের আয়োজন করলে পর্যটকরা আরো বেশি আকৃষ্ট হবে।
কুকরি-মুকরির বাবুগজ্ঞ গ্রামের হোমস্টে সার্ভিসের নারী উদ্যেক্তা শারমিন আক্তার নিলুফা বলেন, ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই স্বল্প খরচে বিশেষ এই সার্ভিস তারা চালু করেছেন। জনপ্রতি ৩’শ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। বাবুগঞ্জ ছাড়াও হাজিপুর ও পাতিলা গ্রামে তাদের এমন থাকার রুম রয়েছে। বর্তমানে পর্যটকদের চাপ বেশ ভালো রয়েছে। অনেক সময় তাদের রুম দিতে পারিনা।
স্থানীয়রা জানায়, আজ থেকে প্রায় চারদশক আগেও দ্বীপটিতে তেমন জনবসতি ছিলনা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এটি একটি ইউনিয়নে পরিনত করা হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান মহাজোট সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দ্বায়িত্ব গ্রহণের পর এই দ্বীপটির উন্নতি শুরু হয়। চরটিতে জনসংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি। নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে অত্যাধুনিক রেষ্ট হাউজ। পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, আব্রেলা শেড, আরসিসি ব্যঞ্চসহ বিভিন্ন স্থাপনা হয়েছে। সারবেরনি ক্যাবলের মাধ্যমে চলছে বিদ্যূৎ সংযোগের কাজ। নিরাপত্তার সার্থে কাজ করছে একটি পুলিশ ক্যাম্প।
পর্যটন আকর্ষণ এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে এই কুকরি-মুকরিতে কাজ করছে পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মো: কামালউদ্দিন জানান, যখন কোন এলাকায় পর্যটটকরা আসে, তখন সেখানে উন্নয়ন হয়। মানুষের আর্থ সামজিক অবস্থার উন্নতী ঘটে। এখানে আগের চাইতে টুরিষ্ট অনেক বেড়েছে। ইতোমধ্যে এখানে লক্ষাধীক টুরিষ্ট এসেছে। এই অর্থবছরের শেষের নাগাত অথবা আগামী অর্থবছর ৩ লক্ষ টুরিষ্ট আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
চরফ্যাসন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন আখন বলেন, ইতোমধ্যে কচ্ছপিয়া ঘাট যেতে এবং কুকরি-মুকরিতে যাতায়াতের জন্য ১২ কোটি টাকা ব্যায়ে সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে কুকরির আরো সুজোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ সার্বিক উন্নয়নে তাদের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে।