অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শুক্রবার, ২৭শে জুন ২০২৫ | ১৩ই আষাঢ় ১৪৩২


লালমোহনে মোমেনা চৌধুরীর একক মঞ্চ নাটক লাল জমিন


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ ভোর ০৪:২৭

remove_red_eye

১০২৬




মো: জসিম জনি, লালমোহন থেকে  : ১৪ বছর বয়সী কিশোরী। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন। দুরন্ত বালিকাজীবন, বর্ণিল কৈশোর, দুঃসহ বয়ঃসন্ধিকাল। মুহূর্তেই এককাল থেকে আরেককালে যাচ্ছেন তিনি, নিয়ে যাচ্ছেন যেন দর্শককেও। মঞ্চই বাড়ির উঠোন, খড় ছিটানো, এক্কাদোক্কা খেলা, ফসল ফলনের জায়গা, পদ্ম-শাপলা ফোটা বিল। দর্শকের সামনে পুরো মঞ্চটাই যেন এক টুকরো বাংলাদেশ ...। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে এক নির্যাতিত বালিকার আর্তনাদের কাহিনী ‘লাল জমিন’। মান্নান হীরার রচনা ও সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় সোমবার রাতে লালমোহন থানা কম্পাউন্ডে প্রদর্শিত হয় নাটকটি। এতে একক অভিনয় করেন মোমেনা চৌধুরী। যুদ্ধস্মৃতি জাগিয়ে তোলা নাটকে মোমেনার অনবদ্য অভিনয় আবেগাপ্লæত করে তোলে দর্শকদের। মঞ্চের জনপ্রিয় মুখ মোমেনা।
এই বিখ্যাত নাটকের আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ। মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে সারাদেশে নাটকটি মঞ্চায়ন শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় লালমোহন থানায় ১৩৬ তম প্রদর্শনী করে মোমেনা চৌধুরী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ভোলা জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান রুমি।
লালজমিনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে লালমোহন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাসেলুর রহমান মাইকে ঘোষণা দিলেন, আর কিছুক্ষণ পরেই ‘লাল জমিন’ নিয়ে মঞ্চে উঠবেন মোমেনা চৌধুরী। মুহূর্তেই পিনপতন নীরবতা নেমে আসে মঞ্চস্থানজুড়ে।
এবার মোমেনা উঠলেন, মঞ্চে তখন মিটিমিটি রঙিন আলো। দেশজুড়ে যে ‘লাল জমিন’ আর মোমেনার কীর্তিগাথা রচিত, সেটা উপভোগের সুযোগে দর্শক সারি যেন স্থির। মোমেনা নিজেই ফুটিয়ে তুলছেন একের পর এক চরিত্র।
নাটকের বিষয় মুক্তিযুদ্ধ। মোমেনা তাঁর অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক সংলাপ দিচ্ছেন আর দর্শকদের চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছে। একক অভিনয়। মঞ্চ নাটকের এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। প্রথমদিকে মোমেনা ধীরস্থির থাকলেও খানিক পরে পাল্টে যায় তার অভিনয়ের ধরন। তখন ফুটে ওঠে মঞ্চ মাতানোর মুন্সিয়ানা।
১৪ বছর বয়সী কিশোরী। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন। দুরন্ত বালিকাজীবন, বর্ণিল কৈশোর, দুঃসহ বয়ঃসন্ধিকাল। মুহূর্তেই এক কাল থেকে আরেক কালে যাচ্ছেন তিনি, নিয়ে যাচ্ছেন যেন দর্শককেও। মঞ্চই বাড়ির উঠান, খড় ছিটানো, এক্কাদোক্কা খেলা, ফসল ফলনের জায়গা, পদ্ম-শাপলা ফোটা বিল। দর্শকের সামনে পুরো মঞ্চটাই যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। মোমেনার অভিনয় ধীরে ধীরে এক অনন্য উচ্চতায় উঠতে শুরু করে।
মাঠভর্তি সব দর্শক স্তম্ভিত হয়ে মোমেনার অভিনয় দেখছিলেন, নিশ্চুপ মুগ্ধতায়। নাটকের ঠিক মাঝামাঝিতে দেখা যায় খানখান হয়ে ভেঙে পড়া মোমেনার স্বপ্ন। শেষে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে পাওয়া বাংলাদেশ যেন লুটেরাদের রাজ্য! অবাধ শোষণ, নির্যাতন, বঞ্চনা আর প্রতারণার অভয়ারণ্য। প্রায় ৭১ মিনিটের নাটকটি মঞ্চায়নের পর দর্শক মাঠ ছারছিল না। আরো কিছুক্ষণ বসে শুনলো অতিথিদের মুখের কথা। নাটকের কথা। বললেন মোমেনা চৌধুরী নিজেও।
২০১১ সালে ‘শূন্যন’ নামের রেপার্টরি থিয়েটার মঞ্চে আনে মান্নান হীরার লেখা নাটক ‘লাল জমিন’। নির্দেশনার দায়িত্ব পান সুদীপ চক্রবর্তী। এ নাটকের মধ্য দিয়ে মোমেনা চৌধুরীর আত্মপ্রকাশ ঘটে একক অভিনেত্রী হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় চৌদ্দ ছুঁই-ছুঁই এক কিশোরীকে নিয়ে নাটকের গল্প। তাঁর মুক্তিযুদ্ধ, জীবনযুদ্ধ নিয়ে এগিয়ে চলে কাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরীর জীবনে ঘটে যায় ভয়ানক সব ঘটনা। কিশোরীর সাদা ধবধবে জমিন-জীবন নয় মাসে কী করে একটা ‘লাল জমিন’ হয়ে ওঠে- তা নিয়েই এই নাটক।