অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শুক্রবার, ২৭শে জুন ২০২৫ | ১২ই আষাঢ় ১৪৩২


যুদ্ধ থামতেই বাস ফাঁকা, ইরান থেকে ফিরতে সাড়া নেই বাংলাদেশিদের


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৫শে জুন ২০২৫ রাত ০৮:৪৫

remove_red_eye

১৫

যুদ্ধাবস্থার প্রেক্ষাপটে ইরান থেকে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরতে নিবন্ধন করেছিলেন, তাদের অনেকেই এখন আর ফিরতে চাইছেন না। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরই দেশে ফেরার বিষয়ে তাদের আগ্রহ কমে গেছে। নিজ নাগরিকদের দেশে ফেরাতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ চালু থাকলেও এখন আর ইরান থেকে ফিরতে সাড়া নেই অনেক বাংলাদেশির।

বুধবার (২৫ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ইরান থেকে দেশে ফিরে আসতে এখন পর্যন্ত ২৫০ জন বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন। আজ (বুধবার) তাদের মধ্যে ৯২ জনকে বাসে পাকিস্তান স্থলসীমান্ত দিয়ে ফেরানোর কথা রয়েছে। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর সেই সংখ্যা ৪০ জনে নেমে আসে। স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে তেহরান থেকে এই যাত্রীদের নিয়ে বাস ছাড়ার কথা ছিল।

তবে বাস ছাড়ার সময় পর্যন্ত দেশে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের সংখ্যা ৪০ জন থেকে আরও কমে ২০ জনেরও নিচে নেমে আসতে পারে বলে ধারণা করছেন এ কর্মকর্তা। বলেন, ‘বাস ভর্তি তো দূরে থাক, বাসে কোনো যাত্রী পাই কি না কে জানে।’

 

জানা যায়, যুদ্ধাবস্থার কারণে ইরানে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা দেশে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তাদের ইরানের মারজাভেহ থেকে বেলুচিস্তান প্রদেশের তাফতান সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করানোর বিষয়ে একমত হয় ইসলামাবাদ। এরপর তাদের ফ্লাইটে করাচি থেকে দুবাই হয়ে ট্রানজিটে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা ছিল। করাচি থেকে দুবাই ছাড়াও অন্য বিকল্প রুটও বিবেচনায় রাখা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইরান ও পাকিস্তানে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, শুরুতে নারী-শিশুদের পাশাপাশি ইরানে চিকিৎসা নিতে যাওয়া নাগরিকদের দেশে ফেরানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার।

গত ১২ জুন ইরানের একটি সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ১৩ জুন ইরানও জবাব হিসেবে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা শুরু করে। এতে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘাত শুরু হয়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা মধ্যপ্রাচ্য।

 

সংঘাতের তীব্রতা দ্রুত বাড়তে থাকার মধ্যেই গত ২১ জুন রাতে ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় বি-২ বোমারু বিমান দিয়ে বাংকারবিধ্বংসী বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

টানা প্রায় ১২ দিন ধরে চলা এই সংঘাতে উভয় পক্ষেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মুখে অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।

তেহরানে থাকা বাংলাদেশিদের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথম ৯২ জনের তালিকায় ২৫ জনের মতো বাংলাদেশি ছিলেন, যারা কিডনি প্রতিস্থাপনসহ নানা ধরনের চিকিৎসার জন্য তেহরানে এসেছিলেন। এখন যুদ্ধ বন্ধ হওয়ায় তারা স্থলপথে এত লম্বা যাত্রা করে ফিরতে চাইছেন না। আকাশপথ খুললে বিমানে করেই ফিরতে চান তারা।

অন্য একটি সূত্র জানায়, ইরানে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। এর মধ্যে তেহরানে রয়েছেন প্রায় ৪০০ জন। দেশটিতে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ৬৭২ জন, যাদের মধ্যে শিক্ষার্থী রয়েছেন ৬৬ জন।

কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানে বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় যুদ্ধের কারণে শুরুতে ফিরতে চাইলেও যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় এখন আর ফিরতে চাইছেন না তারা।

এর আগে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের পাকিস্তান হয়ে দেশে ফেরত আনার বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর দেশে ফিরতে আগ্রহী সব বাংলাদেশিকে দ্রুত নাম-ঠিকানা ও প্রয়োজনীয় তথ্যসহ তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রেজিস্ট্রেশন করার আহ্বান জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।